আল কোরআনের শিক্ষা: জুলুমকারীদের প্রতি কঠোর বিধান ও শাস্তি
ইসলামে জুলুম একটি অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ, যার বিরুদ্ধে পবিত্র আল কোরআনে বারবার সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জালিমদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছেন এবং তাদের পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে জুলুমকারীদের শাস্তি, পরিণতি এবং তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের অবস্থার কথা আলোচনা করা হয়েছে, যা মানবতার জন্য শিক্ষা প্রদান করে।
BLOG
ইসলামে জুলুম একটি ঘৃণিত কাজ এবং পবিত্র আল কোরআনে বারবার এটি সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি জালিমদের পছন্দ করেন না এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছেন। ইসলামী শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, যা জুলুমের সম্পূর্ণ বিপরীত। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে জালিমদের শাস্তি, তাদের পরিণতি এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, যারা অন্যায় ও অবিচার করে, তারা আল্লাহর অসন্তোষের শিকার হবে এবং কঠোর শাস্তি ভোগ করবে।
পবিত্র কোরআনে জালিমদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। সূরা হুদ-এর ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই জালিমরা সফলকাম হবে না।" এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, যারা অন্যায়ভাবে মানুষের অধিকার হরণ করে বা সমাজে অন্যায়ের বিস্তার ঘটায়, তারা দুনিয়াতে সাময়িকভাবে লাভবান হলেও পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে, সূরা আনআম-এর ৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের শিকড় উপড়ে ফেলা হলো।" অর্থাৎ, আল্লাহ তাদের চূড়ান্ত ধ্বংস করে দেন এবং তাদের জন্য রেহাই থাকে না।
আল কোরআনে জালিমদের জন্য নির্ধারিত শাস্তি কেবল আখিরাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দুনিয়াতেও তাদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বহু জালিম শাসক ও অবিচারকারী জাতি পৃথিবীতে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফেরাউনের ঘটনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে তার সীমাহীন জুলুমের কারণে আল্লাহ তাকে ও তার অনুসারীদের সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত করেছিলেন। সূরা কাসাস-এর ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "অতঃপর আমি তাকে ও তার সৈন্যবাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম।" এটি জুলুমের শাস্তির এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
জুলুম প্রতিরোধ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কোরআন অনুযায়ী, একজন মুসলমানের উচিত জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ানো। সূরা নিসা-এর ৭৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছো না দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুদের মুক্তির জন্য, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জালিম জাতির হাত থেকে উদ্ধার করো।" এই আয়াতটি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে।
জুলুমের শাস্তি শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জাতিগত এবং সামষ্টিকভাবেও প্রয়োগ হয়। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে এমন জাতির ধ্বংসের বিবরণ দেয়া হয়েছে, যারা নিজেদের সমাজে জুলুমের বিস্তার ঘটিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, আদ ও সামুদ জাতির ধ্বংসের পেছনে তাদের অন্যায় ও অবিচার মূল কারণ ছিল। সূরা হুদ-এর ১০২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "তোমার পালনকর্তার শাস্তি যখন অন্যায়কারী জনপদকে পাকড়াও করে, তখন তা বড়ই কঠোর ও মর্মন্তুদ হয়।" এটি প্রমাণ করে যে, সমাজে জুলুম অব্যাহত থাকলে সামষ্টিকভাবে তার প্রতিফল ভোগ করতে হয়।
কোরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, জুলুমকারীদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। সূরা আনআম-এর ৯৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "আর যদি তুমি দেখতে, যখন জালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করবে এবং ফেরেশতারা তাদের হাতে প্রসারিত করে বলবে, তোমরা বের করো তোমাদের প্রাণ। আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে।" এই আয়াত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, মৃত্যুর মুহূর্ত থেকেই জালিমদের জন্য কঠিন পরীক্ষার সূচনা হয়।
যারা অন্যায় ও অবিচারের পথ ত্যাগ করে, তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শন করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাঁর দয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, যারা সত্যিকারের তওবা করে এবং নিজেদের ভুল শুধরে নেয়, তাদের জন্য ক্ষমার দরজা খোলা রয়েছে। সূরা জুমার-এর ৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করেন।" এটি নির্দেশ করে যে, আল্লাহর দয়া সীমাহীন এবং তিনি অনুতপ্ত বান্দাদের ক্ষমা করেন।
পরিশেষে বলা যায়, জুলুম ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এটি মানবজাতির জন্য ধ্বংসের কারণ হতে পারে। পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের উচিত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং জুলুমের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কোরআনের শিক্ষা আমাদের জানায় যে, জালিমরা কখনোই সাফল্য লাভ করতে পারে না, বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। সুতরাং, আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হলো সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।