হতাশার অন্ধকারে আল কোরআনের আলো

জীবনের চড়াই-উতরাইয়ে হতাশা যখন গ্রাস করে, তখন আশার আলো কোথায়? পবিত্র আল কোরআন আমাদের শেখায়, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। ধৈর্য, দোয়া ও নামাজের মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এই লেখায় কোরআনের আয়াতের আলোকে হতাশা মোকাবিলার পথ ও আল্লাহর করুণা সম্পর্কে জানা যাবে, যা আপনার মনে শান্তি ও আশা জাগাবে।

BLOG

মোঃ ইমরান আহম্মেদ

2/10/20251 মিনিট পড়ুন

black and brown book on gray textile
black and brown book on gray textile

মানুষের জীবন নানা চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। কখনো সাফল্য আসে, আবার কখনো ব্যর্থতা মানুষকে গভীর হতাশার অতল গহ্বরে ঠেলে দেয়। হতাশা এমন একটি মানসিক অবস্থা, যা কখনো কখনো জীবনকে অর্থহীন করে তোলে। কিন্তু পবিত্র আল কোরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহর রহমত থেকে কখনো হতাশ হওয়া উচিত নয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন, কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি আশার দুয়ারও খুলে রাখেন।

আল কোরআনে বহুবার বলা হয়েছে যে, কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। সূরা যুমার-এর ৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করেন।" এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, যত বড় সমস্যাই আসুক, আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে, ধৈর্য ধারণ করে দোয়া করে তিনি যে কোনো সংকট থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন।

মানুষ যখন জীবনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন হতাশ হয়ে পড়ে। অথচ আল কোরআন ধৈর্য নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩-তে আল্লাহ বলেন, "হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।" অর্থাৎ, কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর নিকট আশ্রয় নিলে তিনি নিশ্চয়ই উত্তরণের পথ দেখিয়ে দেন।

অনেক সময় দুনিয়াবি দুঃখ-কষ্ট মানুষের হৃদয়ে গভীর আঘাত হানে। কেউ হয়তো প্রিয়জন হারিয়েছে, কেউবা ব্যর্থতার গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে। এই সময় কোরআন আমাদের শেখায়, কষ্টের পর স্বস্তি আসে। সূরা ইনশিরাহ, আয়াত --তে বলা হয়েছে, "নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে।" এটি আল্লাহর একটি মহা প্রতিশ্রুতি, যা মানুষকে আশার আলো দেখায়।

মানুষ যখন হতাশ হয়ে পড়ে, তখন শয়তান তাকে আরও বিপথে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। সে চায় মানুষ যেন আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কিন্তু কোরআন আমাদের শয়তানের ধোঁকায় না পড়তে বলে। সূরা আল-আরাফ, আয়াত ২০০-তে আল্লাহ বলেন, "যদি শয়তানের কুমন্ত্রণ তোমাকে প্রলুব্ধ করে, তাহলে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।" তাই, হতাশার মুহূর্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা তাঁর আশ্রয় চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জীবনে হতাশা কাটানোর জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা তাওবা ইস্তিগফারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ, মানুষ পাপ করে এবং তা কখনো কখনো তার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। কিন্তু যদি সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেন। সূরা হূদ, আয়াত -তে বলা হয়েছে, "তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তারপর তাঁর দিকে ফিরে এসো, তাহলে তিনি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন।" অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে ফিরে আসাই মানসিক প্রশান্তির প্রধান উপায়।

জীবনের কঠিন সময়ে একজন মুমিনের উচিত সবর আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রাখা। কারণ, আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম। অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না কেন আমাদের জীবনে কঠিন সময় আসে, কিন্তু পরে দেখা যায় যে, সেই দুঃসময়ের মধ্যেই ছিল বড় কোনো কল্যাণ। সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২১৬-তে বলা হয়েছে, "তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করতে পারো, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হতে পারে; আর তোমরা কোনো কিছুকে পছন্দ করতে পারো, অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।"

পরিশেষে, জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে আল কোরআনের শিক্ষা হলোআল্লাহর প্রতি নির্ভর করা, ধৈর্য ধারণ করা, নামাজ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া, শয়তানের ধোঁকায় না পড়া, তাওবা করা এবং সর্বদা আশাবাদী থাকা। কারণ, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কখনো পরিত্যাগ করেন না। সুতরাং, হতাশার গভীর অন্ধকারে আল কোরআনের আলোই মানুষের একমাত্র সত্যিকারের দিকনির্দেশনা।

আরও পড়ুনঃ আল কোরআনের শিক্ষা: জুলুমকারীদের প্রতি কঠোর বিধান ও শাস্তি